দেবী পালিত।
ও মেয়ে তোর সময় হলো দুর্গা রূপে এবার সাজার,
আকাশ পাতাল দীর্ণ করে দশাস্ত্রে যে সাজ রে এবার।
চাই না আর লক্ষ্মীরূপে,কি লাভ হয়ে বিদ্যেবতী,
চামুন্ডাতে ওঠ মা জেগে,যাক বয়ে যাক রক্তনদী।
অট্টহাসে চারিদিকে মহিষাসুর আসছে ঘিরে-
বাজা রে তোর রণশঙ্খ, ত্রিশূলে দে বক্ষ চিরে।
আকাশ বাতাস মাটি জলে সৃষ্টি যতই দিস না বুনে,
অসুর পুরুষ শরীর জুড়ায় তবু তোরই রাঙা খুনে।
ও মেয়ে তোর,বয়েস যা হোক,কামুক পুরুষ তৃপ্তি খোঁজে
নারী,তোর ঐ কোমলতায় পুরুষ শুধু শরীর বোঝে।
তুই মেয়েটা পথে ঘাটে নরম মাংস টাটকা স্বাদু ,-
ঠোঁট চেটে নেয় পুরুষ তারা ছদ্মবেশে মিথ্যে সাধু ।
রোজই মেয়ের নাম পাল্টায়,একই থাকে ভোগ্য শরীর,
এমন করে আর কতকাল বইবে এই ব্যর্থ রুধির!
কান্না তো তোর অনেক হলো,অস্ত্রে এবার ওঠ না সেজে,
জাগ রে রণচন্ডী রূপে,প্রলয়-বিষাণ উঠুক বেজে।
এবার মেয়ে তোর হোক বোধন,দশটি অস্ত্রে দুর্গা রূপে-
ত্রিনয়নে অগ্নি জ্বলুক,ভয়ে সৃষ্টি উঠুক কেঁপে
–-–––——————————––
এই নারীদিবস তার হোক।
দেবী পালিত।
যে বউটি পাঁচবাড়িতে খাটে,
আট ফুট বাই আটফুটের ঘরে ফিরে
রান্নাবান্না করে
আর লম্পট মাতাল স্বামীর মার খায় রোজকার অভ্যাসে–
এই নারীদিবস তার হোক।
যে দেহাতি বউটি সারাদিন ইটের পাঁজা বয়
সন্ধ্যেবেলা চুলার ধারে বসে
পরিবারের রুটি তৈরি করে আর
রাতে মরদের খাদ্য হয়
এই নারী দিবস তাকে নতুন দিশা দিক।
যে নারীর হাতের নিটোল ছোঁয়ায়
প্রতিদিন জ্বলে ওঠে সংসারের মঙ্গলদীপ,
অথচ সংসার তাকেই কোনো মর্যাদা দেয় না–
এই নারীদিবস তাকে মর্যাদা দিক।
যে নির্ভীক মেয়েটি ভরা আদালতে এসে অটল প্রত্যয়ে
তার ধর্ষককে চিনিয়ে দেয়,
আর ভাইয়ের হত্যাকারীর খোলস ছিঁড়ে দেয়-
এই নারীদিবস তার কথা বলুক।
বারো বছরের সদ্য কিশোরী যে গরীব গেঁয়ো মেয়েটি
লেখাপড়া করতে চেয়ে বিয়ের প্রতিবাদ করে
স্কুলের দিদিমনির কাছে আশ্রয় নেয়–
এই নারীদিবস তাকে নিরাপত্তা দিক।
যে নিরুপায় মেয়েটি সন্ধ্যাবেলায় সেজেগুজে কানাগলির মোড়ে শরীর বেচে সমাজের বিকৃতিটুকু শুষে নেয়–
এই নারীদিবস তাকে নতুন জীবন দিক।
অনাহারে অবহেলায় হাড় জিরজিরে যে নারী
সন্তানের মুখে বুকের দুধটুকুও দিতে না পেরে ছটফটিয়ে মরে-
এই নারীদিবস তাকে এক মুঠো খিদের অন্ন দিক।
ডাস্টবিনের নোংরায় যে নারীভ্রূণটি পচে ওঠে–
এই নারীদিবস তাকে জন্ম দিক।
বিয়ের বাজারে যে মেয়েটি
পণের আগুনে দাউদাউ জ্বলে মরে,
অথবা শুধুমাত্র নারী জন্মের অপরাধে
যার চোখের জল শুকোয় না,
যে মেয়েটির আকাশে ওড়া হয় না,
যে মেয়েটির গান লেখা হয় না,
রানিং ট্র্যাকে দৌড়ানো হয় না,
অথবা টেলিস্কোপে চোখ রেখে জানা হয় না দূর আকাশের তারাকে-
এই নারীদিবস তাদের লড়াইয়ের
শক্তি দিক,
দিক স্বাধিকারের চেতনা।
এই নারীদিবস শুধুমাত্র তার হোক।